ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যই হলো আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু। নিজের ত্বককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও উজ্জ্বল রাখতে সবাই চায়। তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সম্পর্কে জানা না থাকায় নিজের ত্বকের যত্ন নিতে পারে না। মূলত তাদের জন্যই আজকের আর্টিকেল যারা নিজের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান।
ত্বকের উপরের অংশ বিভিন্ন পাউডার, ক্রিম, ফাউন্ডেশন বা মেকাপ দিয়ে সুন্দর করা গেলেও অরিজিনালি ত্বকের কোন উপকার হয় না এতে। তাই আমাদের উচিৎ লেবুর রস ও চিনির পেস্ট, মসুর ডালের পেস্ট, মধু ও দইয়ের পেস্ট, কলার পেস্ট সহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে ত্বকের প্রতি যত্নশীল হওয়া। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় এবং ফর্সা হওয়ার উপায় সহ আরও চমকপ্রদ উপায় নিয়ে চলুন শুরু করি আজকের আর্টিকেলটি।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
পাতিলেবুর রস দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি উপায়, পাতি লেবুর রস আপনার মুখের ত্বকের মধ্যে থাকা তৈলাক্ত পদার্থ দূর করে ফলে আপনার ত্বক অনেক উজ্জ্বল হয়ে যায়। প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে পাতি লেবুর রসের ব্যবহারের বিকল্প নেই। তবে লেবুর রস সরাসরি মুখের ত্বকে লাগানো উচিৎ নয়। এতে ত্বকে নানান রকমের সমস্যা হতে পারে অথবা ত্বকে জ্বালাপোড়ার মত বড় সমস্যাও হতে পারে। তবে আপনি সরাসরি লেবুর রস লাগানোর পরিবর্তে অন্য ভাবে লেবুর রস ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন এতে সমস্যা নেই।
আপনি লেবুর রস আর এক চা চামচ চিনি মিক্স করে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে সেই মিশ্রণ আপনার মুখের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য লাগাতে পারেন। তবে লাগিয়ে একটু ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি মুখের ত্বকে ব্যবহারের ৫ মিনিটের মধ্যে অবশ্যই মুখ ধুয়ে নিবেন। লেবুর রসের ম্যাসাজ শেষে ভালো কোন ক্রিম লাগাতে পারেন ত্বকে। এতে আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
মসুর ডাল দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে মসুর ডালের বেশ গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। মসুর ডাল বেশ খানিকটা সময় ভিজিয়ে নিয়ে সেটা বেঁটে বা ব্লেন্ডার করে মুখের ত্বকে ব্যবহার করলে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়। মসুর ডাল ত্বকে লাগিয়ে শুকিয়ে নেওয়ার পর মুখের ত্বক পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন ডাল মুখের ত্বকে শুকিয়ে গেলে কথা বলবেন না। কেননা এতে আপনার ত্বকের চামড়ায় চাপ লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।
মধু দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
অল্প সময়ের মধ্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য মধু সবচেয়ে উপকারী একটি উপাদান। মধু খেলে যেমন নানান উপকার আছে তেমনি মধু ত্বকে লাগালেও বেশ উপকার আছে। মধু ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, ত্বক নরম হয়, ত্বকের স্পট বা কালো দাগ দূর হয়। আবার মুখের ব্রণ বা ক্ষতের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও জীবানু ধ্বংস করতে মধু বেশ কাজের। মধুর সাথে দই, দুধ, কলা, লেবুর রস ও পেঁপে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
কলা দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
কম সময়ের মধ্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে কলা খুবই উপযোগী একটি উপাদান। কলার সাথে দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। আপনি প্রথমে একটি বাটিতে কিছুটা দুধ ও একটি কলা নিবেন। এরপর এই দুই উপাদান একসাথে মিহি করে চটকে নিবেন ও এই কলা দুধের পেস্ট মুখের ত্বকে ব্যবহার করবেন।
শসা দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য শসা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রথমে একটি শসা থেকে রস বের করে নিন। এরপর শসার রসের সাথে কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন ভালোভাবে। এরপর একটি কাঁচের বোতলে এই মিশ্রণ রেখে মুখ আটকে রেখে সংরক্ষণ করে রাখুন। এরপর প্রতিদিন দুএকবার করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন এই মিশ্রণ। এটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সহ আপনার ত্বক নরম ও কোমল হবে।
টমোটো ও মধু দিয়ে রূপচর্চা
টমেটো ও মধু এই দুটি উপাদান মেয়ে ও ছেলেদের রুপচর্চায় বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। টমেটো ও মধু দিয়ে তৈরি রুপচর্চার পেস্ট ত্বক ফর্সা করার জন্য ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য অতুলনীয়। যারা রৌদ্রে পুড়ে ও কঠোর পরিশ্রম করে নিজের ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়েছেন তারা সহজেই টমেটো আর মধু ব্যবহার করে ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন। নিচে টমেটো ও মধু দিয়ে রুপচর্চার পেস্ট তৈরির কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
টমোটো ও মধু দিয়ে রূপচর্চার প্যাক কিভাবে তৈরি করবো?
- প্রথমে একটি ব্লেন্ডার নিন
- এরপর ব্লেন্ডারের সাহায্যে টমেটো ব্লেন্ড করে নিন
- এবার ব্লেন্ড করা টমেটোর সাথে ২-৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন
- এবার এগুলো ভালো করে মিক্স করুন
এই টমেটো ও মধুর মিক্স দ্রবন আপনার মুখের ত্বকে ২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানিতে আপনার মুখ ধৌত করুন। মুখমণ্ডল ধৌত করার পরে আপনি আপনার মুখের দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনার মুখ আগের থেকে অনেক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হয়ে গেছে। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে রৌদ্রের প্রকোপ থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়।
পেঁপে ও ডিম দিয়ে রূপচর্চা
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য পেঁপে ও ডিম দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি বেশ কার্যকরী। প্রাকৃতিক ভাবে ফর্সা হওয়ার জন্য এই পেঁপে ও ডিমের তৈরি প্যাকের তুলনা নেই। পেঁপে ও ডিম একসাথে ত্বকে ব্যবহারের ফলে ত্বকের কালো ভাব, ব্রন ডিগ, বিষক্রিয়া, জীবানু ও নানান রকমের ব্যাকটেরিয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়। এই মিক্সের সাথে কিছুটা দই ব্যবহারে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতার এক অনন্য পরিবর্তন লক্ষ করবেন আপনি।
পেঁপে ও ডিম দিয়ে রূপচর্চার প্যাক তৈরি করতে কি কি লাগবে?
- প্রথমে একটি পেঁপে নিয়ে পেঁপের রস বের করুন
- পেঁপের রস বের হলে ৩ চামচ রস নিন
- ২ চামচ দই নিতে হবে
- ৪ চামচের মত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিতে হবে
- ৩ চামচ আমন্ড অয়েল নিতে হবে
- ১/২ চামচ গ্লিসারিন নিতে হবে
- একটি ডিম নিতে হবে
- ডিমের কুসুম ছাড়া বাকি সাদা অংশ নিতে হবে
পেঁপে ও ডিম দিয়ে রূপচর্চার প্যাক তৈরি করবো কিভাবে?
- প্রথমে গ্লিসারিন বাদে এবং ডিম বাদে বাকি সকল উপাদান একটি পাত্রে রেখে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- এই মিক্সিং পেস্ট তৈরির পর এটি ২ ঘন্টা খানেকের মত সময় ফ্রিজে রেখে দিন।
- এবার ফ্রিজ থেকে পেস্ট বের করুন।
- এবার এর সাথে ডিম ও গ্লিসারিন ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্টটি মুখের ত্বকে লাগিয়ে ব্যবহার করুন।
এই পেস্ট মুখের ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘণ্টার মত রাখতে হবে এবং আধা ঘণ্টা পর হালকা গরম পানি ব্যবহার করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে নিয়মিত পেঁপে ও ডিম দিয়ে রুপচর্চার পেস্ট মুখের ত্বকে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে ও ত্বক ফর্সা হবে।
পরিশেষে
আজকের পোস্টটি আশা করছি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। আপনারা কি কি বিষয়ে আর্টিকেল চান তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। প্রতিদিন নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন আপডেট জানতে। সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।